“রুকইয়াহ্” একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ “ঝাড়-ফুঁক (Exorcism)”। ইসলামী শারইয়াহ-সম্মত ঝাড়-ফুঁকের পদ্ধতিকে “রুকইয়াহ্ শারইয়াহ্ (Islamic Exorcism)” বলা হয়। এটি একটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে কুরআন থেকে তিলাওয়াত, দোয়া (যিকির) পাঠ এবং রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাযিঃ) থেকে ব্যবহার পাওয়া যায় -এমন কিছু জিনিসের ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে বদনজর, হিংসার কুপ্রভাব, জ্বিনের আসর, যাদু (Black Magic), ওয়াসওয়াসা (OCD) ইত্যাদি সহ ‘দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও রোগ ভালো হচ্ছে না বা মেডিকেল টেস্টে অসুখ ধরা পড়ছে না’ -এজাতীয় (শারিরীক ও মানসিক) সমস্যার চিকিৎসা করা হয়।
এটি মনের আশা পূরণ, কাউকে বশ করা কিংবা কোনো অসাধ্য সাধনের জন্য বিশেষ কোনো তদবির নয়। নিজের সমস্যার জন্য নিজে নিজে রুকইয়াহ করা যায় (এটাকে সেল্ফ-রুকইয়াহ্ বলে)। যিনি ‘রুকইয়াহ্ শারইয়াহ্’ প্রাকটিস করেন তাকে ‘রাকী’ বলা হয়।
প্রচলিত বাতিল পদ্ধতির ঝাড়-ফুঁক এবং রুকইয়াহ শারইয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ
❁ প্রচলিত কিছু (বাতিল) পদ্ধতিতে জ্বিনের সাহায্য নেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে জ্বিনকে খুশি করে তাকে দিয়ে কাজ করাতে হয়। আর জ্বিনকে খুশি করতে অনেক ক্ষেত্রেই কুফর, শিরক বা হারাম (ইসলামে নিষিদ্ধ) কাজে লিপ্ত হতে হয়। তাছাড়া জ্বিনের সাহায্যে দেওয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে অনেক সুস্থ মানুষ জ্বিনে আক্রান্ত হওয়ার বহু নজির রয়েছে।
অনেকে বলেন, তিনি ভালো জ্বিনের সাহায্য নিচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হলো শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিজেকে দ্বীনদার, পরহেজগার বলে পরিচয় দেয়। আর মানুষের পক্ষে এগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। যারা এজাতীয় কথাবার্তা বিশ্বাস করেন; তারাই কেবল দাবি করেন যে তিনি ভালো জ্বিনের সাহায্য নেন।
পক্ষান্তরে, রুকইয়াহ শারইয়াহ-তে পূর্ণরূপে একমাত্র, শুধুমাত্র, কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপরেই তাওয়াক্কুল ও ভরসা রেখে কুরআনের আয়াত, দোয়া ও জিকির ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, কোনো প্রকার জ্বিনের সাহায্য নেওয়া হয় না।
❁ প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে অনেক ব্যাখ্যা না জানা পদ্ধতি, অর্থ না জানা বাক্য বা সংকেত ইত্যাদির ব্যবহার। যেগুলি যাদু হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। শয়তান জ্বিনেরা মানুষকে বিভিন্ন ভাবে যাদুবিদ্যা শেখায়, এতে মানুষের জন্য ক্ষতি ব্যতীত কোনো কল্যাণ/ উপকার নেই (সূরা বাকারাহ’র ১০২ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)।
অনেক সময় যাদু প্রয়োগের ফলে রোগী নতুন করে বিভিন্ন প্রকার মারাত্মক ও জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এমন অনেক নজির রয়েছে, যেখানে রোগী এক উদ্দেশ্যে যাদুকর/তান্ত্রিক/ওঝার কাছে গিয়েছে, অথচ এর কারণে সে অন্যান্য আরো নানা জটিল ও কঠিন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি যাদুবিদ্যা কুফর হওয়ার কারণে এর আশ্রয় গ্রহণ করায় পরকালীন শাস্তি তো আছেই।
পক্ষান্তরে, রুকইয়াহ-তে কেবল স্পষ্ট কুরআনের আয়াত, দোয়া, জিকির ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। ফলে কোন ধরণের অস্পষ্টতা, সংশয় বা যাদুবিদ্যা প্রয়োগের কোনো সম্ভাবনা নেই।
❁ আক্রমণকারী বা ক্ষতিকারক জ্বিন যদি তদবির কারকের জ্বিন অপেক্ষা শক্তিশালী হয়, সে ক্ষেত্রে তার (তদবির কারকের) পক্ষে কিছুই করার থাকে না। পক্ষান্তরে, রুকইয়াহ শারইয়াহ-এর মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় যে কোন জ্বিন-শয়তানের মোকাবেলা করা সম্ভব, আলহামদুলিল্লাহ।
❁ অনেক সময় যাদু কাটতে বা নষ্ট করতে উক্ত যাদুর বিপরীতে জেনে-বুঝে নতুন করে যাদু করা হয় (নাউযুবিল্লাহ)। এতে করে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী ক্রমান্বয়ে আরো জটিল ও মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হতে থাকেন। পক্ষান্তরে, রুকইয়াহ-তে স্পষ্ট কুরআনের আয়াত, দোয়া, জিকির ইত্যাদি ব্যতীত কোন প্রকার অস্পষ্ট পদ্ধতি বা যাদুবিদ্যার ব্যবহার নেই।
রুকইয়াহ করে পরিপূর্ণ ও কাঙ্খিত ফলাফল লাভের জন্য করণীয়/বর্জনীয়ঃ
❁ তাবিজ-কবজসহ সকল প্রকার বাতিল (কুফরী, শিরকী, বিদআতী ও সন্দেহযুক্ত) চিকিৎসা-পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। রাশিফল, হস্তরেখা বিশ্লেষণ, বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কার ইত্যাদি বিশ্বাস না করা। তান্ত্রিক, কবিরাজ, ওঝা, জ্বিন-হুজুর বা এজাতীয় কারো কাছে না যাওয়া, তাদের কোনো বক্তব্য বিশ্বাস বা সত্যায়ন না করা। তাদের দেয়া তাবিজ, কবজ, পড়া পানি, তেল, সুতা, কাপড়, (তাবিজ ফর্মে গাছ, ফল, কাঠ, শিকড়) ইত্যাদি কোনো কিছু ব্যবহার, ধারণ বা সংরক্ষণ না করা।
ইতিপূর্বে গ্রহণকৃত বাতিল চিকিৎসার সকল উপকরণ (যদি থাকে) নষ্ট করে ফেলা (যথাযথ নিয়মে) এবং উত্তমরূপে তওবা করা, এরপর রুকইয়াহ শুরু করা। বাতিল চিকিৎসার পাশাপাশি রুকইয়াহ চিকিৎসা গ্রহণ না করা। কেননা এ দুটি পরস্পর বিরোধী জিনিস (তাওহীদ বনাম শির্ক); আর একটি সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পরস্পর বিরোধী দুই জিনিস একত্রে ধারণ করা যায় না।
❁ অন্তত ফরয-ওয়াজিব পর্যায়ের কোনো ইবাদতে ও বিধি-বিধান পালনে ত্রুটি বা ঘাটতি না থাকা (যেমনঃ সালাত আদায় করা, পর্দা করা ফরয)। নাজায়েজ ও হারাম কাজ থেকে দূরে অবস্থান করা (যেমনঃ সুদ হারাম, বিবাহবহির্ভূত প্রেম-প্রীতি হারাম)। উপার্জন সম্পূর্ণ হালাল ও সন্দেহমুক্ত হওয়া। আল্লাহর উপরে পূর্ণরূপে তাওয়াক্কুল করা। ইখলাছে ঘাটতি না থাকা।
❁ বাসগৃহে কোনো ছবি, মুর্তি, পুতুল, কার্টুন, বাদ্যযন্ত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি কোনো কিছু না রাখা। প্রয়োজনীয় ছবি যেমনঃ পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা টাকায় থাকা ছবি ইত্যাদি ভালোভাবে ঢেকে রাখা। বেপর্দা ও ইসলামী শরীয়াহ বিরোধী যে কোনো অনুষ্ঠান, নাটক-সিনেমা, পর্ণোগ্রাফী, গান-বাদ্য, ভিডিও গেমস, কার্টুন ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা (বাচ্চদেরকে স্মার্টফোন/ডিভাইস থেকে দুরে রাখতে চেষ্টা করা)।
❁ রুকইয়াহ বিষয়ক প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে রোগ/সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য নিয়ত করা, ইয়াকীনের সাথে কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া। আর এই বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা রয়েছে, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাতেই রুকইয়াহ দ্বারা রোগ/সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ হয়, এতে ঝাড়-ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই।
নোটঃ উল্লিখিত বিষয়গুলির কোনোটিতে কারো কিঞ্চিৎ ঘাটতি থাকলে রুকইয়াহ করে কোনো উপকার হবে না -বিষয়টি এমন নয়। তবে, বিশ্বাসে ও কর্মে কোনো ব্যক্তি যতবেশি ইসলামিক হবে, রুকইয়াহ থেকে উপকৃত হওয়ার পথ তার জন্য ততবেশি সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ।
রুকইয়ার অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহঃ
❁ কুরআন তিলাওয়াত করা, জিকির/দোয়া পাঠ করা, এগুলি পাঠ করে রোগী বা সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তির গায়ে বা আক্রান্ত স্থানে ফুঁ দেওয়া, আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে এগুলি পাঠ করা, (প্রয়োজনে) মৃদুভাবে আঘাত করা। রোগী নিজে তিলাওয়াত করা, তিলাওয়াতের রেকর্ডকৃত ‘অডিও’ শোনা।
❁ পানি, তেল, কালোজিরা, মধু ইত্যাদিতে কুরআন ও দোয়া পাঠ করে ফুঁ দিয়ে (পড়ে) তা ব্যবহার করা (পান করা, গোসল করা, শরীরে মাখা ইত্যাদি)।
❁ প্রয়োজনে হিজামা (কাপিং থেরাপি), আজওয়া খেজুর, সোনাপাতা, বরইপাতা, আতর, কস্টাস ইত্যাদি ব্যবহার করা।
রুকইয়াতে কি কি সমস্যার চিকিৎসা হয়?
সাধারণভাবে সকল প্রকার (শারীরিক ও মানসিক) সমস্যার জন্যই রুকইয়াহ করা যায়। প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশিও রুকইয়াহ করা যায় (যেমনঃ কারো পেটে ব্যাথা হলে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ সেবনের পাশাপাশি সে নিজে নিজে পানি পড়ে পান করলো)। তবে বদনজর, হিংসার কুপ্রভাব, জ্বিনের আসর, ওয়াসওয়াসা (OCD), বিভিন্ন প্রকার যাদু বা ব্লাক ম্যাজিক (যেমনঃ বিবাহ বন্ধের যাদু, বিচ্ছেদের যাদু, অসুস্থতার যাদু, পড়া-লেখা নষ্ট করা বা মস্তিষ্ক বিকৃতির যাদু) ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়া এবং দীর্ঘদিন চিকিৎসায় সমস্যা ভালো হচ্ছে না বা মেডিকেল টেস্টে অসুখ ধরা পড়ছে না -এমন সমস্যার চিকিৎসায় “রুকইয়াহ” বহুল প্রচলিত।
কোনো সমস্যার জন্য রুকইয়াহ প্রয়োজন কি না কিভাবে বুঝবো?
Ruqyah Diagnosis: কারো সমস্যা/রোগটি রুকইয়াহ বিষয়ক সমস্যা কি না বা রুকইয়াহ বিষয়ক কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটা বোঝার জন্য প্রাথমিকভাবে “রুকইয়াহ লক্ষণ ইনডেক্স” (লিংকঃ ruqyahijama.com/lokkhon ) -এ উল্লেখিত লক্ষণগুলি নিজের সাথে মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। আরো নিশ্চিত হতে সমস্যা অনুযায়ী রুকইয়াহ বিষয়ক পরামর্শ কিছুদিন ফলো করে বা সরাসরি রুকইয়াহ করে তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। আবার অনেক সমস্যা এমন আছে যেটা স্পষ্টই বোঝা যায় যে এটা রুকইয়াহ বিষয়ক সমস্যা (জ্বিন-যাদু, বদনজর, ওয়াসওয়াসা ইত্যাদি)।
তবে কবিরাজ বা জ্বিন-হুজুরদের থেকে পাওয়া বক্তব্যের মতো সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যার বিবরণ (যেমনঃ অমুককে তমুক এই উদ্দেশ্যে এইভাবে যাদু করেছে অথবা অমুক নামের তমুক জ্বিন ঐ স্থান থেকে এই উদ্দেশ্যে তার ঘাড়ে লেগেছে ইত্যাদি) জানার মতো কোনো টেকনোলোজি রুকইয়াতে নেই। সমস্যা শুনে, লক্ষণ মিলিয়ে, রুকইয়ার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত ধারণাই রুকইয়াহ করে সুস্থ হওয়ার জন্য যথষ্টে হয়, আলহামদুলিল্লাহ।
রুকইয়াহ শুরু করবেন যেভাবেঃ
Treatment Plan: প্রাথমিকভাবে নিজে নিজে রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডির ওয়েবসাইট (লিঙ্কঃ ruqyahbd.org) থেকে রুকইয়াহ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে সমস্যা অনুযায়ী সেল্ফ-রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। এছাড়া সমস্যাটি বিস্তারিত লিখে রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডির ফেসবুক গ্রুপে (লিঙ্কঃ facebook.com/groups/ruqyahbd) পোস্ট দিয়ে সেখান থেকে পাওয়া গাইডলাইন ফলো করা যেতে পারে।
কোনো কারণে নিজেরা রুকইয়াহ করা সম্ভব না হলে, সমস্যা খুব তীব্র বা জটিল মনে হলে, কোনো একজন অভিজ্ঞ রাকীর নিকটে কিংবা রুকইয়াহ সেন্টারে গিয়ে সরাসরি রুকইয়াহ করানো যেতে পারে।
নোটঃ রুকইয়াহ একটি কর্ম-বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি। কোনো রুকইয়াহ সেন্টারে বা রাকীর নিকটে সরাসরি রুকইয়াহ সেশন এবং সেসময়ে হওয়া কাজগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একইভাবে রাকী কর্তৃক দেয়া প্রেসক্রিপশন, পরবর্তী করনীয় (Homework) বা পরামর্শগুলোও গুরুত্ব সহকারে নিয়মিত ফলো করা (রোগ/সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য) সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
একজন রাকীর কর্মপরিধি ও সীমাবদ্ধতাঃ
❁ একজন রাকী কোনো ব্যক্তিকে দেখেই বা তার নাম শুনেই তার সমস্যা বলে দেয়া, গায়েব (অদৃশ্য বা অনুপস্থিত কিছু) বা ভবিষ্যৎ কিছু সম্পর্কে কোনোকিছু বলে দেয়া -এজাতীয় কোনো অলৌকিক ক্ষমতা ধারণ করেন না। তিনি বিশেষ কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী নন, কোনো জ্বিনের সহায়তাও গ্রহণ করেন না। তাবিজ-কবচ, সুতা, কাপড়, লোহা, মাদুলী ইত্যাদি কোনো কিছু প্রদান করেন না।
❁ তিনি রোগ/সমস্যাটি থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে, ইসলামী শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে, আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে, রুকইয়াহ শারইয়ার পদ্ধতি অনুযায়ী যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারেন, দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন।
❁ রোগ/সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ একমাত্র আল্লাহরই হাতে, তিনি (আল্লাহ) যখন যা যেভাবে চাইবেন তখন তা সেভাবেই হবে। রোগ/সমস্যাটি ঠিক কতো দিনে নির্মূল হবে বা আদৌ হবে কিনা -এব্যাপারে রাকীর নিজস্ব কোনো জ্ঞান বা ক্ষমতা কিছুই নেই।
নোটঃ রুকইয়াহ করতে, পানি, তেল ইত্যাদি পড়তে বিশেষ বা গোপন কোনো আমল বা সাধনা, বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা পীরের এজাজত (অনুমতি) ইত্যাদি কোনো কিছুই প্রয়োজন হয় না। শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারে -এমন যে কেউ (নারী-পুরুষ উভয়ই) এটা করতে পারবে।
রুকইয়াহ সেশনে একজন রাকীর কর্মপদ্ধতিঃ
❁ সমস্যা বিস্তারিত শোনা। সমস্যা বুঝতে এবং পরামর্শ দিতে জানা প্রয়োজন -এমন বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা। (প্রয়োজন হলে) রুকইয়াহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া।
❁ ইতিপূর্বে গ্রহণকৃত বাতিল পদ্ধতির চিকিৎসার সকল উপকরণ (যদি থাকে) যথাযথ নিয়মে নষ্ট করে দেয়ার ব্যবস্থা করা, এবিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা। তারপর মূল “রুকইয়াহ সেশন” শুরু করা। অবস্থা ভেদে সরাসরি রুকইয়াহ সেশনে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে।
❁ সর্বশেষ রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্টস (পানি, তেল, কালোজিরা, মধু ইত্যাদি) ব্যবহারের নিয়ম-কানুনসহ বিস্তারিত প্রেসক্রিপশন প্রদান এবং পরবর্তী করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা।
রুকইয়াহ সেশনে সাধারণত যে সব জিনিসপত্র প্রয়োজন হয়ঃ
(১) পানি, (২) তেল (জয়তুন তেল বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল হলে ভালো হয়), (৩) মধু, (৪) কালোজিরা, (৫) আতর, (৬) একটা ছোটো বালতি, (৭) একটা গামছা/টাওয়াল বা টিস্যু (বালতি ও টাওয়াল/টিস্যু বমি হলে ব্যবহারের জন্য, কোনো রুকইয়াহ সেন্টারে আসলে এগুলো আনতে হবে না) ইত্যাদি।
সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তি নারী/মহিলা হলেঃ
(৮) একটি বড়ো ওড়না বা চাদর, (৯) সাথে অন্তত একজন মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি। ইত্যাদি।
রুকইয়াহ সেশন চলাকালীন প্রতিক্রিয়াঃ
রুকইয়াহ প্রয়োজন -এমন সমস্যা থাকলে কারো কারো ক্ষেত্রে রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এমনকি কোনো ব্যক্তি তার বিদ্যমান সমস্যা সম্পর্কে আগে থেকে অবগত না থাকলেও রুকইয়ার সময় উপস্থিত থাকায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্যা থাকা সত্বেও সরাসরি রুকইয়াতে দৃশ্যমান তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা নাও দিতে পারে, বিশেষ করে চিকিৎসার প্রথম দিকে।
সম্ভাব্য যে যে প্রতিক্রিয়া হতে পারেঃ- সাধারণত ঘুমঘুম ভাব, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বস্তি লাগা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, মাথা/ঘাড়/পেট/বুক/পিঠ বা শরীরের অন্য কোথাও ব্যথা করা, অবশ হয়ে আসা, জ্বালা-পোড়া করা ইত্যাদি। এছাড়াও সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তির ভেতরে থাকা জ্বিন কথা বলে উঠতে পারে, হাত-পা ছোড়াছুড়ি, চিল্লাপাল্লা ইত্যাদি করতে পারে।
রুকইয়াহ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এজাতীয় (এক বা একাধিক) প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পাওয়া অথবা কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না পাওয়া, উভয় অবস্থাই স্বাভাবিক। এতে ভয় পাওয়া, ঘাবড়ে যাওয়া কিংবা হতাশ হওয়ার মতো কোনো বিষয় নেই। আর এগুলি ক্ষতস্থানে ঔষধ প্রয়োগের ফলে অনুভূত জ্বালাপোড়ার মতো রোগ/সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের প্রক্রিয়ার অংশ, রুকইয়ার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিংবা ক্ষতিকর দিক নয়।
নোটঃ রুকইয়াতে প্রকাশ পাওয়া প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান সমস্যার ধরণ, অবস্থা ও তীব্রতার একমাত্র নির্ধারক বা পরিমাপক নয়, তবে এটা সমস্যার বাস্তব অবস্থা অনুধাবনে এবং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরীতে সহায়ক হয়।
রুকইয়াহ সেশন-পরবর্তী অবস্থা ও করণীয়ঃ
❁ রুকইয়াহ সেন্টারে অথবা ঘরোয়াভাবে (সরাসরি) রুকইয়াহ করার পর সমস্যাগুলো একেবারে চলে যেতে পারে, তাৎক্ষনিকভাবে কমে যেতে পারে, (সাময়িকভাবে) কিছুটা বেড়ে যেতেও পরে, নতুন কোনো উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যার দৃশ্যমান পরিবর্তন (হ্রাস-বৃদ্ধি) প্রকাশ পেতে কিছুটা সময়ও লাগতে পারে (বিশেষ করে চিকিৎসার শুরুতে)। এছাড়াও অনেকের রুকইয়াহ বিষয়ক পরামর্শগুলো পালনের ক্ষেত্রে বিরক্তি, ভুলে যাওয়া, অলসতা, আগ্রহহীনতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
❁ এমতাবস্থায় প্রতিক্রিয়া/অবস্থা যেমনই হোক পূর্ণরূপে সুস্থ/সমস্যামুক্ত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল (ভরসা) রেখে সবর (ধৈর্য্য ধারণ) -এর সাথে রুকইয়াহ বিষয়ক পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা (রাকী কর্তৃক প্রদত্ত রুকইয়াহ প্রেসক্রিপশন) গুরুত্বের সাথে ফলো করে যাওয়া এবং বেশী বেশী দোয়া ও ইস্তিগফার করা। পাশাপাশি প্রয়োজন হলে প্রচলিত চিকিৎসাও গ্রহণ করা (রাকীর সাথে পরামর্শ করে)।
❁ সুস্থ/সমস্যামুক্ত হতে একটু সময় লাগলে অধৈর্য্য হয়ে পুনরায় (রুকইয়ার পাশাপাশি অথবা রুকইয়াহ বাদ দিয়ে) বাতিল চিকিৎসার আশ্রয় গ্রহণ না করা। কেননা, এতে করে পুনরায় (স্পষ্ট বা অস্পষ্টভাবে) কুফর-শির্কের আশ্রয় গ্রহণের ফলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে দূরত্ব তৈরী হওয়া, রুকইয়ার মাধ্যমে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন বাধাগ্রস্থ হওয়া, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাটি আরো বৃদ্ধি পাওয়া বা ভিন্ন কোনো দিকে মোড় নেয়া -এজাতীয় নানা প্রকার ঝুঁকি রয়েছে।
সুস্থ/সমস্যামুক্ত হতে কতোদিন সময় লাগতে পারে?
❁ রুকইয়াহ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতোই একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। অন্যান্য রোগ-ব্যাধির মতো বদনজর, জ্বিন-যাদু সংক্রান্ত সমস্যার মধ্যেও হালকা ও গুরুতর আছে, অন্যান্য সমস্যার ন্যায় রুকইয়াহ সংশ্লিষ্ট সমস্যার তীব্রতায়ও তারতম্য আছে।
❁ আমরা কেবলমাত্র রোগ/সমস্যাটি থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামী শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে, আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে, রুকইয়াহ শারইয়ার পদ্ধতি অনুযায়ী যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি। আল্লাহ কাকে কতোদিনে সুস্থ করবেন সেটা কেবলই তাঁর হাতে। আমরা যেমন অনেক জটিল সমস্যাও খুব দ্রুত ভালো হয়ে যেতে দেখেছি, একইভাবে সমস্যাটি তেমন তীব্র মনে হয়নি অথচ দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়েছে -এমন উদাহরণও রয়েছে।
❁ কারো কারো ক্ষেত্রে রোগ/সমস্যা নির্মূল/দূর হতে কয়েকটি রুকইয়াহ সেশন বা অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসময়ে করণীয় হচ্ছে, রুকইয়ার কাজগুলি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে করে যাওয়া। পাশাপাশি আল্লাহর উপরে ভরসা রেখে ধৈর্য্য ধারণ করা এবং বেশি বেশি দোয়া-ইস্তিগফার করা।
❁ তবে আমরা যেটা নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি সেটা হলো; আলহামদুলিল্লাহ, উপরে উল্লেখিত নানা ধরণের সমস্যা থেকে বিশ্বব্যাপী নিয়মিত বহু মানুষ রুকইয়াহ করে আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থ/সমস্যামুক্ত হচ্ছেন, একইভাবে আমাদের এখানেও।
চিকিৎসক ও রোগীর সেবকের জন্য নিরাপত্তাঃ
সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা যাদু প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন- “আর তারা তা (যাদু) দ্বারা কারো কোনো ক্ষতি করতে পারতো না, আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীত”। বাস্তবতা হলো জ্বিনেরা বা যাদুকরেরা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যাকে তাকে যেভাবে ইচ্ছা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না, তাদের সেই সাধ্য বা ক্ষমতা নেই।
রুকইয়াহ বিষয়ক সমস্যাগুলো অন্যান্য সাধারণ রোগ-ব্যাধির মতোই একটি অসুস্থতা। এতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির চিকিৎসা করলেই বা তাকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাহায্য করলেই কিংবা তার আশেপাশে অবস্থান করলেই অন্যরাও আক্রান্ত হয়ে পড়বে; (বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে) বিষয়টি এমন নয়।
পাশাপাশি বিশুদ্ধ হাদিসে প্রাপ্ত নিরাপত্তার আমলগুলো নিয়মিত চালু রাখলে জ্বিন-যাদু সহ সকল প্রকার ক্ষয়-ক্ষতি থেকে আল্লাহ তায়া’লা সুরক্ষা দিবেন, ইনশাআল্লাহ।
রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট হিসাবে হিজামা (কাপিং থেরাপি):
হিজামা বা কাপিং থেরাপি (Cupping Therapy) সুন্নাহ সম্মত প্রাচীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই হিজামায় শেফা রয়েছে” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২২০৫)। তিনি (সাঃ) নিজেও হিজামা গ্রহণ করেছেন। ব্যাথা-যন্ত্রণা, চর্মরোগ সহ নানা প্রকার সমস্যার চিকিৎসার পাশাপাশি রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট হিসাবেও হিজামার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। বিশেষ করে জ্বিন-যাদুতে আক্রান্ত হওয়ার ফলে সৃষ্ট নানা ধরণের সমস্যার জন্য হিজামায় উপকার পেতে দেখা যায়।
আলহামদুলিল্লাহ, রুকইয়াহ এন্ড হিজামা সার্ভিস খুলনা-তে রুকইয়ার পাশাপাশি হিজামা সার্ভিসও প্রদান করা হয়।
[Updated on October, 2024]
=============
রুকইয়াহ এন্ড হিজামা সার্ভিস খুলনা
===
সেন্টারের ঠিকানাঃ
২৪৩, খানজাহান আলী রোড, খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার বিপরীতে,
খুলনা সদর, খুলনা।
===
যোগাযোগ ও এপয়েন্টমেন্টঃ
+8801757266226
===
সেন্টারে আসার পূর্বে অবশ্যই ফোনে কথা বলে সময়/শিডিউল নিয়ে আসবেন।।