কোনো কারণে রোগী বা সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তি নিজে সেল্ফ-রুকইয়াহ্ করতে না পারলে, সমস্যা হঠাৎ বেড়ে গেলে অথবা অভিজ্ঞ কোনো রাকী (যিনি রুকইয়াহ করেন) কর্তৃক ঘরোয়া ভাবে রুকইয়াহ (ইসলামী শারইয়াহ-সম্মত ঝাড়-ফুঁক) করতে পরামর্শ দেয়া হলে পরিবারের সদস্যরা মিলে (অথবা যে কোনো একজন) নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে রুকইয়াহ করতে পারেন।
রুকইয়াহ করে পরিপূর্ণ ফলাফল পাওয়ার জন্য করনীয়/বর্জনীয়ঃ
(ক) তাবিজ-কবজসহ সকল প্রকার বাতিল (কুফরী, শিরকী, বিদআতী ও সন্দেহযুক্ত) চিকিৎসাপদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। তান্ত্রিক, কবিরাজ, ওঝা, জ্বিন-হুজুর বা এজাতীয় কারো কাছে না যাওয়া, তাদের কোনো বক্তব্য বিশ্বাস বা সত্যায়ন না করা। তাদের দেয়া তাবিজ, কবজ, কোনো কিছু মিশ্রিত পানি, তেল, সুতা, কাপড় ইত্যাদি কোনো কিছু ব্যবহার বা সংরক্ষণ না করা। ইতিপূর্বে গ্রহণকৃত বাতিল চিকিৎসার সকল উপকরণ নষ্ট করে ফেলা (যথাযথ নিয়মে) এবং উত্তমরূপে তওবা করা। রাশিফল, হস্তরেখা বিশ্লেষণ, বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কার ইত্যাদি বিশ্বাস না করা।
(খ) অন্তত ফরয-ওয়াজিব পর্যায়ের কোনো ইবাদতে ত্রুটি বা ঘাটতি না থাকা (সলাত আদায় করা, পর্দা করা ফরয)। নাজায়েজ ও হারাম কাজ থেকে দূরে অবস্থান করা (বিবাহবহির্ভূত প্রেম-প্রীতি হারাম) । উপার্জন সম্পূর্ণ হালাল ও সন্দেহমুক্ত হওয়া। আল্লাহর উপরে পূর্ণরূপে তাওয়াক্কুল করা। ইখলাছে ঘাটতি না থাকা।
(গ) বাসগৃহে কোনো ছবি, মুর্তি, পুতুল, কার্টুন, বাদ্যযন্ত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি কোনো কিছু না রাখা। প্রয়োজনীয় ছবি যেমনঃ পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা টাকায় থাকা ছবি ইত্যাদি ভালভাবে ঢেকে রাখা। বেপর্দা ও ইসলামী শরীয়াহ বিরোধী যে কোনো অনুষ্ঠান, নাটক-সিনেমা, পর্ণোগ্রাফী, গান-বাদ্য, ভিডিও গেমস, কার্টুন ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা (বাচ্চদেরকে স্মার্টফোন/ডিভাইস থেকে দুরে রাখতে চেষ্টা করা)। ইত্যাদি।
প্রস্তুতিঃ
(ক) বাতিল চিকিৎসা পদ্ধতির সকল উপকরণ (শরীর ও বসবাসের স্থান থেকে) দুর করে ফেলা এবং নষ্ট করে ফেলা (যদি থাকে)। যেমনঃ তান্ত্রিক, কবিরাজ, ওঝা, বাবা, হুজুর বা দরবার থেকে নেয়া তাবিজ-কবজ, (পড়া) পানি, তেল, তাগী, সুতা, কাপড়, আংটি ইত্যাদি।
এগুলো নষ্ট করার নিয়তে একটা পাত্রে কিছু পানি পড়ে নিবেন (নিয়ম পরে দেয়া আছে)। তারপর উল্লিখিত জিনিসপত্র ঐ পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন। তাবিজ খুলে/ভেঙ্গে ভিতরের কাগজ/জিনিসপত্র বের করে ছিঁড়ে/কেটে টুকরো টুকরো করে নিবেন। প্রয়োজনে হাতুড়ি, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহার করবেন। এগুলি করার সময় মুখে হালকা আওয়াজে তিন কুল পাঠ করতে থাকবেন (বারবার)।
কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর সেগুলো মাটিতে পুতে দিতে পারেন, পুড়িয়ে দিতে পারেন, নদী-খাল ইত্যাদিতে অথবা নির্জন কোনো জাগায় ফেলে দিতে পারেন।
(খ) বাসগৃহ থেকে সকল প্রকার প্রণীর ছবি, মুর্তি, পুতুল, কার্টুন, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা। প্রয়োজনীয় ছবি যেমনঃ পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা টাকায় থাকা ছবি ইত্যাদি ভালভাবে ঢেকে রাখা।
(গ) পানি, তেল (সম্ভব হলে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল), কালোজিরা, মধু ইত্যাদি পড়ে নেয়া (পড়ার নিয়ম পরে দেয়া আছে)।
(ঘ) বাড়ির/পরিবারের সদস্যরা (যে ক’জন সম্ভব) দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করে জীবনের সকল পাপ কাজসমূহ, শরীয়ত সমর্থিত নয় এমন সকল চিকিৎসা-তদবীর, তন্ত্র-মন্ত্র, শিরক, কুফর, বিদআত ইত্যাদি থেকে (যদি ইতিপূর্বে গ্রহণ করে থাকেন) উত্তমরূপে তওবা করা এবং সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।
(ঙ) সামর্থ্য অনুযায়ী রোগ/সমস্যাটি থেকে মুক্তির নিয়তে কিছু সাদকাহ (দান-খয়রাত) করা।
রুকইয়াহ বিষয়ক দিক-নির্দেশনাঃ
অডিও ও ঘরোয়া রুকইয়াহ সেশনঃ-
(ক) সমস্যা/রোগ হতে মুক্তি লাভের নিয়তে সমস্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা কমন (এক বা একাধিক) অডিও রুকইয়াহ (প্রতিটি) প্রতিদিন অন্তত একবার করে (সম্ভব হলে অযু অবস্থায়) শুনাবেন, সুবিধা মতো সময়ে (যদি প্রয়োজন হয় এবং শোনানো সম্ভব হয়)।
(খ) প্রতিদিন অন্তত ১ ঘন্টা করে (অবস্থা ভেদে সময় কম/বেশি করা যাবে) রুকইয়াহ সেশন করবেন (নিয়ম পরে দেয়া আছে)। অডিও শোনানোর সময় বা রুকইয়াহ করার সময় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এবিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা পরে দেয়া আছে।
(গ) যদি ডাক্তার দেখানোর মতো কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে রুকইয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের পরামর্শও গ্রহণ করতে পারেন।
আমলসমূহঃ-
(ক) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে এবং ঘুমানোর পূর্বে (প্রিয়ড চলাকালীন সকালে, সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর পূর্বে*),
(১) আয়াতূল কুরছী পড়া = ১ বার।
(২) তিন কুল পড়ে ২ হাতে ফুঁ দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত মাসেহ করা (হাত বুলানো) = ৩ বার।
(খ) পানাহারের শুরুতে, ঘরে প্রবেশ/বাহির হওয়া এবং দরজা-জানালা খোলা/বন্ধ করার সময় “বিসমিল্লাহ” বলা।
(গ) টয়লেটে যাওয়ার দোয়া এবং ঘুমানোর পূর্বের দোয়া গুরুত্ব সহকারে পড়া। ইত্যাদি।
বিঃদ্রঃ উল্লিখিত আমলসমূহ সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তিসহ পরিবারের সকলেই নিয়মিত করতে চেষ্টা করবেন। সম্ভব হলে এগুলির সাথে দৈনন্দিন নিরাপত্তার অন্যান্য আমলগুলিও (ইনডেক্স থেকে ২ নং PDF) যোগ করবেন।
পড়া পানি, তেল ইত্যাদি ব্যবহারের নিয়মঃ-
(ক) সকালে খালিপেটে, দুপুরে গোসোলের পরে এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ মধু এবং এক চিমটি (সামান্য পরিমান) কালোজিরা মিশিয়ে সমস্যা/রোগ হতে মুক্তির নিয়তে বিসমিল্লাহ বলে (তিন শ্বাসে) পান করা।
(খ) গোসোলের সময় এক বালতি পানিতে এক গ্লাস পড়া পানি মিশিয়ে গোসোল করা। গোসোলের পরে পুরো শরীরে পড়া তেল মাখা।
(গ) (জ্বিন-যাদুর সমস্যা থাকলে) বাড়ির সকল কক্ষে এবং আঙিনায় পড়া পানি ছিটিয়ে দেয়া বা স্প্রে করা, পরপর ৩/৫/৭ দিন (সন্ধ্যায়)।
ঘরোয়া রুকইয়াহ সেশনঃ
১ম ধাপঃ
সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তিসহ (সম্ভব হলে) উপস্থিত সকলে অযু করে নেয়া। তারপর ৩ কুল পড়ে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত বুলানো, এভাবে ৩ বার। ১ গ্লাস পড়া পানি নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তিকে (৩ শ্বাসে) পান করানো।
২য় ধাপঃ
শুরুতেই “সময়” (১/২/৩… ঘন্টা) ও “নিয়ত” (যেমনঃ আল্লাহর ইচ্ছায় রুকইয়ার মাধ্যমে এই রোগ বা সমস্যাটি দূর হয়ে যাক) নির্ধারণ/ঠিক করে নেয়া।
তারপর আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখে নিম্নোক্ত সূরা, আয়াত ইত্যাদি প্রতিটি ৩/৫/৭ বার করে সকলেই “উচ্চ-মধ্যম” আওয়াজে পড়তে থাকা, মাঝে মাঝে সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তির গায়ে ফুঁ দেওয়া।
একটা (সূরা, আয়াত ইত্যাদি) শেষ হলে পরেরটা, পুরোটা শেষ হলে আবার শুরু থেকে, এভাবে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। মাথা অথবা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে, কানের কাছাকাছি মুখ রেখে (উচ্চ আওয়াজের জন্য) তেলাওয়াত করা ভালো।
পাঠ্য সূরা-আয়াত ইত্যাদিঃ-
০১) দরুদে ইব্রাহীম (নামাজের দরুদ),
০২) সূরা ফাতিহা,
০৩) আয়াতুল কুরসী,
০৪) সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (ঐচ্ছিক),
০৫) সূরা কাফিরুন (ঐচ্ছিক),
০৬) সূরা ইখলাছ,
০৭) সূরা ফালাক,
০৮) সূরা নাস,
০৯) কানের কাছে জোরে জোরে আযান দেয়া (জ্বিনের সমস্যা থাকলে)।
➤ উপরোক্ত সূরা, আয়াত ইত্যাদির পরিবর্তে “রুকইয়ার কমন আয়াত ও দোয়া”-ও (ইনডেক্স থেকে ৩ নং PDF) পড়তে পারেন।
সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াঃ-
সাধারণত যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে; ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, মাথা/ পেট/ পিঠ/ বুক বা শরীরের অন্য কোথাও ব্যথা করা, অতিরিক্ত গরম/ ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি। জ্বিন-যাদুর সমস্যা থাকলে ভিতরে থাকা জ্বিন কথা বলে উঠতে পারে, হাসি-কান্না, চিল্লাপাল্লা ও হাত-পা ছুড়াছুড়ি করতে পারে, হুমকি-ধমকি দিতে পারে। এমনকি দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়া নাও হতে পারে।
করনীয়ঃ-
(ক) প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক তাতে না ঘাবড়িয়ে ধৈর্য, সাহস ও স্থিরতার সাথে পূর্ব-নির্ধারিত সময়ের শেষ পর্যন্ত (প্রয়োজনে আরো বেশি সময় পর্যন্ত) রুকইয়াহ চালিয়ে যাওয়া। অডিও রুকইয়াহ শুনে এজাতীয় কোনো প্রতিক্রিয়া হলে অডিওটি না থামিয়ে শেষ পর্যন্ত শোনানো।
(খ) ব্যথার জায়গায় পড়া তেল মাখিয়ে দেয়া, সেখানে হাত রেখে তেলাওয়াত করা, ফুঁ দেওয়া। বমি বমি ভাব হলে কোনো একটা পাত্রে বমি করিয়ে ফেলতে চেষ্টা করা। প্রয়োজন হলে সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তিকে ভালোভাবে ধরে রাখা।
(গ) জ্বিন কথা বলে উঠলে ভয় না পেয়ে, তার কথা আমলে না নিয়ে, শুধুমাত্র এজাতীয় কথা বলে তাকে সতর্ক করা “তাকে আর কষ্ট দিস না, বের হয়ে যা, নইলে আল্লাহর ইচ্ছায় তোর শাস্তি আরো ভয়াবহ হবে…” ইত্যাদি। পাশাপাশি তেলাওয়াত চালিয়ে যাওয়া। জ্বিনের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে গিয়ে তেলাওয়াত বিঘ্নিত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকা।
দ্রষ্টব্যঃ কোনো কারণে ঘরোয়াভাবে রুকইয়াহ করা সম্ভব না হলে কোনো একজন অভিজ্ঞ রাকী দ্বারা রুকইয়াহ করানো।
পানি, তেল ইত্যাদি পড়বেন যেভাবেঃ
বিভিন্ন প্রকার সমস্যা ও রোগ-ব্যধির জন্য পানি, তেল, কালোজিরা, মধু ইত্যাদি পড়ার নিয়মঃ-
(ক) প্রথমে অযু করে নিন (অযু না থাকলে) এবং কয়েকবার ইস্তিগফার পড়ুন। তারপর যে সমস্ত জিনিস পড়তে হবে (পানি, তেল ইত্যাদি) সেগুলো গুছিয়ে সামনে নিয়ে বসুন। নিয়ত ঠিক করে নিন (কি উদ্দেশ্যে এগুলো পড়ছেন)।
(খ) নিম্নোক্ত দরুদ, সূরা ও আয়াতগুলি ৩/৫/৭ বার করে (যেটা সম্ভব হয়) পড়বেন (আওয়াজ করে, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ সহ)। প্রতিটি সূরা/আয়াত পড়া শেষে পানি, তেল ইত্যাদিতে ফু দিবেন।
০১) দরুদে ইব্রাহীম (নামাজের দরুদ),
০২) সূরা ফাতিহা,
০৩) আয়াতুল কুরসী,
০৪) সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (ঐচ্ছিক),
০৫) সূরা কাফিরুন (ঐচ্ছিক),
০৬) সূরা ইখলাছ,
০৭) সূরা ফালাক,
০৮) সূরা নাস।
বিঃ দ্রঃ রুকইয়াহ (ঝাড়-ফুঁক) করতে, পানি, তেল ইত্যাদি পড়তে বিশেষ কোনো আমল বা সাধনা, বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা পীরের এজাজত (অনুমতি) ইত্যাদি কোনো কিছু প্রয়োজন হয় না। নারী-পুরুষ উভয়ই এটা করতে পারবেন।।
=====
রুকইয়াহ এন্ড হিজামা সার্ভিস -খুলনা
সেন্টারের ঠিকানাঃ
পিটিআই মোড়, খুলনা সদর, খুলনা।
যোগাযোগ ও এপয়েন্টমেন্টঃ
+8801757266226